কপোতাক্ষ টাইমস ডেক্স : বন বিভাগ পার্বত্যাঞ্চলে হাতিসহ অন্যান্য বন্য প্রাণী সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছে। গত এক বছরে কাপ্তাই, বিলাইছড়িও লংগদুতে বন্যহাতির আক্রমণে প্রায় ৮জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্ব শেষ গত ১১ মার্চ ২০২১ বেড়াতে এসে হাতির আক্রমণে মারা গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র অভিষেক পাল। জেলার কাপ্তাইসহ তিন উপজেলাতে বন্য হাতির আক্রমণে এ পর্যন্ত প্রায় ৮জনের মৃত্যু ঘটেছে। এ ঘটনা নিয়ে উদ্যোগ প্রকাশ করেছেন এলাকার সচেতন মহল। সরকারি হিসাব মতে কাপ্তাইয়ে ৩জন, লংগদুতে ৩জন ও রাজস্থলীতে ২জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি হিসাব মতে হাতির আক্রমণে আরও বেশী লোক মারা গেছে।
স্থানীয়রা বলেন, বন্যহাতি এখন পাড়া মহল্লায় এসে ঢুকে পড়ে এর কারণ একটাই, সেটা হলো হাতির করিডোর বা আবাসস্থল গুলোতে বেশী বেশী স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে যার কারণে হাতির বিচরণের জায়গা গুলো মানুষের দখলে চলে যাচ্ছে। যার কারণে হাতির চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করছে মানুষ তাই হাতিও মানুষের ক্ষতি করতে শুরু করছে। হাতির পাল যে সব এলাকায় ঘুরাঘুরি করে বা চড়ে বেড়ায় সে সব এলাকায় গড়ে উঠেছে স্থাপনা ও পিকনিক স্পট।
এছাড়াও কেটে ফেলা হচ্ছে বন জংগল। অন্য দিকে হাতির খাবারও সংকট দেখা দিয়েছে। তাই হাতি মরিয়া হয়ে উঠেছে। একবিংশ শতাব্দী আগে পাহাড় ছিল সবুজ আর বর্তমানে পাহাড় হয়ে গেছে ন্যাড়া। এখনও সময় আছে আসুন সবাই মিলে প্রাকৃতিক সম্পদগুলো বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করি। সরকার তথা বন বিভাগ বন্যহাতি নিয়ে ব্যাপক আকারে প্রকল্প গ্রহণ করা উচিৎ বলে আমি মনে করি।
রাঙামাটি সার্কেলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মো. সুবেদার আলী বলেন, রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই, রাজস্থলী ও লংগদু এই তিনটি উপজেলাতে আনুমানিক ৬০-৭০টি বন্যহাতি থাকতে পারে। এসব বন্যহাতি স্থানীয়রা দেখেছেন বলে বন বিভাগকে জানিয়েছেন। তকে হাতি নিরূপণে বন বিভাগের সঠিক কোন তথ্য আছে বলে আমার জানানাই। তবে হাতির খাবার নিয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছেন বন বিভাগ। সে প্রকল্প হয়তো বা অচিরেই বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়াও হাতি যে সব এলাকায় চলাফেরা করে ওই সব এলাকায় বেষ্টনী দিয়ে ওই সীমানা রেখার মধ্যে সহনীয় পর্যায়ে বৈদ্যুতিক সখ সোলার প্ল্যান্সিংএর আওতায় আনা হবে। যেন বৈদ্যুতিক সখ খেয়ে বন্যহাতি পিছু হটে। এতে করে সে আর মানুষের ক্ষতি করতে সক্ষম হবে না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রফিকুজ্জামান শাহ বলেন, কাপ্তাইয়ে আমার জুরিডিকশন মধ্যে প্রায় ৩০টি বন্যহাতি জনগণ দেখেছে বলে বন বিভাগকে জানিয়েছেন। এছাড়াও রাজস্থলী ও লংগদুতেও বন্যহাতি পাল রয়েছে তাই সব মিলে হয়তো বা ৭০-৮০টি বন্যহাতি আছে বলে আমার ধারনা। কাপ্তাইয়ে রাস্তায় হাতির করিডোরের মধ্যে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। যার জন্য হাতির সাথে মানুষের সাথে এখন দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। আর বন্যহাতি বিচরণের জায়গাগুলো মানুষের দখলে চলে গেছে। এসব বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যে বন বিভাগ নিজস্ব উদ্যোগে মাইকিং ও স্থানীয় হেডম্যান, কার্ব্বারি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে সচেতনতামূলক ১০ দিনের একটি কর্মশালা করেছি।
ওই কর্মশালায় হাতে কলমে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে কি ভাবে হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এছাড়াও বন্যহাতি দেখলে করণীয় কি তাও প্রশিক্ষণ কর্মশালায় শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছাড়াও হাতি যেন লোকালয়ে আসতে না পারে সে জন্য হাতির খাবার সংগ্রহ করতে পারে সে জন্য বন বিভাগের অর্থায়নে বনায়নের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে।
এছাড়াও কাপ্তাইয়ে বন্যহাতির এলাকায় ৮কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বন্যহাতি নিয়ন্ত্রণে সোলার প্ল্যান্সিং স্থাপন করা হবে। ইতি মধ্যে সরকার হাতির আবাসস্থল বা করিডোর এবং হাতির সুষ্ঠু সংরক্ষণের জন্য একটি পাইলট প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে মন্ত্রণালয়ে। শুনেছি খুব শিগগীরই ওই প্রকল্প চালু করা হবে। কাপ্তাইয়ে আমার জুরিডিকশন মধ্যে এযাবৎ হাতির আক্রমণে ৩জন মারা গেছে। বাকি ৫জন হয়তো অন্য জুরিডিকশনে মারা গেছে। সম্প্রতি কাপ্তাই-আসামবস্তী সড়কে সচেতনতামূলক জনগণকে সতর্ক করে বন্যহাতির এলাকায় জনস্বার্থে বন বিভাগ সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সচেতনতামূলক মাইকিং করা হয়েছে।