কে এম শাহীনুর রহমান:
সাতক্ষীরার তালায় সেলিনা বেগম (৩৮) নামে এক গৃহবধুকে গলায় গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। উপজেলার হরিশচন্দ্রকাটি গ্রামের হরিশচন্দ্রকাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সন্নিকটে পাইকগাছা-আঠারমাইল মেইন সড়কের কালভার্টের নীচ থেকে লাশ ও হত্যায় ব্যবহৃত একটি গামছা উদ্ধার করেছে তালা থানা পুলিশ। তালা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ শাহিনুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন। এই হত্যার সাথে স্বামী রহমত খাঁ জড়িত থাকার গুজ্ঞন উঠেছে। সে তালা উপজেলার হরিশচন্দ্রকাটি গ্রামের আফাজ খার ছেলে।
রবিবার (৪ এপ্রিল) গভীর রাতে এ ঘটনা বলে জানা গেছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে নিহত সেলিনা বেগমের ভগ্নিপতি আবুল কাশেম বলেন, সেলিনা ও আমার বাড়ি একই জায়গায়। সে এলাকায় দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালায়। তার আগের ঘরের একটি মেয়ে আছে। ঢাকায় গার্মেন্টে চাকরী করে। মেয়েটি খুবই অসুস্থ, তার চিকিৎসার জন্য বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর জন্য রবিবার সন্ধ্যায় তালা বাজারে যায়। রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে আমি ও তার স্বামী রহমত খাঁ মিলে খুঁজতে খুঁজতে হরিশচন্দ্রকাটি প্রাইমারি স্কুলের সামনে কালভার্টের নীচে লাশ দেখতে পাই। পরে আমার ডাক চিৎকারে এলাকাবাসি ছুটে আসে।
তিনি বলেন, রহমত খার আগের এক স্ত্রী ও ২ ছেলে মেয়ে আছে। তার প্রথম স্ত্রী নিজের বাড়িতে থাকে। রহমত একজন জুয়াড়ী ও মাতাল। সে দিনমজুরের কাজ করে, নেশা ও জুয়া খেলার টাকা জোড়াল করার জন্য প্রতি নিয়ত ২ স্ত্রীর টাকা গহনা চুরি করে। গত ১০-১২ দিন পূর্বে সেলিনার ঘরে লুকিয়ে রাখা ১২ হাজার টাকা চুরি করে। এঘটনায় তাদের মধ্যে ঝগড়া হলে ১ম স্ত্রীর কাছে চলে যায়। গত ১ সপ্তাহ আগে প্রকাশ্যে সেলিনা কে হত্যার হুমকি দিয়েছিলো।
নিহতের ভাই মোসলেম গাজী ও আকাম গাজী বলেন, গত ১৫-১৬ বছর পূর্বে রহমত খার সাথে সেলিনার বিয়ে হয়। সে শয়তানি করে কোনো সন্তান নেয়নি। বিয়ের পর থেকে ঘর থেকে টাকা সহ অন্যান্য জিনিষপত্র চুরি করা নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হতো। রবিরার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে এই কালভার্টের পড়ে রহমতের বসে মোবাইলে কথা বলতে দেখেছিলাম।
নাম প্রকাশে একাধিক ব্যক্তি বলেন, রহমত একজন জুয়াড়ী এবং এলাকার চিহ্নিত নেশাখোর। নেশা ও জুয়া খেলা নিয়ে ১ম স্ত্রীর সাথে ঝগড়া হলে ২য় স্ত্রী কাছে যায় আবার ২য় স্ত্রীর সাথে ঝগড়া হলে ১ম স্ত্রীর কাছে যায়। স্ত্রী ২ জনই দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালায়। সে নিয়মিত মাদক সেবন করে। ঘটনার দিন রাতে তাকে রাত ১০ টার দিকে মটরসাইকেলে গ্রামের মধ্যে ঢুকতে দেখেছি।
ঘটনাস্থলে পুলিশের সুরোতহাল রিপোর্টের সময় উপস্থিত উপজেলার গোনালী গ্রামের সালমা বেগম বলেন, লাশের নাভীর নীচের অংশে তলপেটে খোঁচানোর চিহ্ন আছে। সেখান থেকে রক্ত ঝরছে। বুকের উপরের অংশে ও মাথায় বড় আঘাতের চিহ্ন আছে। এসকল অংশে রক্ত জমাট বেঁধে আছে এবং মুখের উপরের অংশ ও নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে। লাশের পাশে একটি টর্চ লাইট, একটি মানিব্যাগ ও বন্ধ অবস্থায় একটি মোবাইল পাওয়া গেছে।
তালা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ শাহিনুর রহমান বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সত্য উৎঘাটনে তদন্ত অব্যহত আছে।
এঘটনায় এখনো কাউকে আটকের খবর পাওয়া যায়নি।