সোমবার , ২৫ মার্চ ২০২৪ | ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আইন ও আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আশাশুনি
  7. কক্সবাজার
  8. কলারোয়া
  9. কালিগঞ্জ
  10. কিশোরগঞ্জ
  11. কুড়িগ্রাম
  12. কুমিল্লা
  13. কুষ্টিয়া
  14. কৃষি
  15. খাগড়াছড়ি

উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা উবায়াদুল হকের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ, করছেন ঠিকাদারী ব্যবসাও! পর্ব-১

প্রতিবেদক
Kopotakkho Times
মার্চ ২৫, ২০২৪ ৮:৫৪ পূর্বাহ্ণ

কে এম শাহীনুর রহমান:

“মাছের রাজা ইলিশ, স্বামীর রাজা পুলিশ” গ্রাম বাংলার এই লোকো কথাকে হার মানিয়েছে তালা উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা উবায়দুল হক। বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথ ব্যবসা, একই প্রকল্পের নামে একাধিক বরাদ্দ দেয়া, কোনো কাজ না করে প্রকল্পের টাকা উঠিয়ে নেয়া, প্রতিটি প্রকল্প থেকে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করছেন তিনি। মসজিদ, মন্দির সহ কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বাদ যাচ্ছে না তার হাত থেকে।

সরেজমিন পরিদর্শণে দেখা যায়, ২০২২-’২৩ অর্থ বছরে তালা উপজেলার ইসলামকাটি ইউনিয়নের বাউখোলা গ্রামের লাকির বাড়ি হতে বিষ্টুর বাড়ি অভিমুখে রাস্তা ইটের সোলিং করণে টিআর (বিশেষ) প্রকল্পে ১,৩৩ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও মাত্র ১ হাজার ইটের কাজ করে সমুদয় টাকা উত্তলোন করা হয়েছে। ওই একই রাস্তায় ছেলের নামের জায়গায় পিতার নাম বসিয়ে টিআর (সাধরণ) আরও ৫২ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়ে টাকা উত্তলোন করা হয়েছে। উপজেলার খলিসখালী ইউনিয়নের বাগডাঙ্গায় রাস্তা ইটের সোলিং করণ প্রকল্পে টিআর (বিশেষ) প্রকল্পে ২ লক্ষ ও কাবিটা (বিশেষ) প্রকল্পে ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। টিআর প্রকল্পের ২ লক্ষ টাকার কাজ হলেও কাবিটা প্রকল্পের সভাপতিকে দুই কিস্তিতে ৬ হাজার টাকা দিয়ে সম্পূর্ণ টাকা পিআইও উবায়দুল হক উঠিয়ে নিয়েছেন।

প্রকল্পের সভাপতি খলিসখালী ইউপি সদস্যা চায়না সরকার এই প্রতিবেদক কে জানান, আমার নামে প্রকল্প দেয়া হয়েছে আমি জানি না। এমন কি কোথায় কাজ করা হয়েছে কি কাজ করা হয়েছে তাও জানি না। তালা উপজেলা পিআইও অফিস থেকে আমার স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া হয়। আমাকে তখন এক হাজার টাকা দেয়। আমি আপত্তি করলে আরও ৪ হাজার টাকা দেয়। এর বেশী কিছু আমার জানা নেই।

উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের টিআর (সাধারণ) প্রকল্পে যথাযথ কাজ করলেও প্রকল্প অফিসের সোহেল ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। সেই ঘুষের টাকা না দেয়ায় এখনো তার বিল পরিশোধ করা হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রকল্পের সভাপতি বলেন, অফিসের সোহেলের মাধ্যমে পিআইও এই ঘুষ বাণিজ্য করেন।

কুমিরা ইউপি’র একজন সদস্য বলেন, পিআইও অফিসের ফাইল রেডি করতে নেয় ২ হাজার টাকা, রাস্তা পরিদর্শন করতে আসলে খরচ হয় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। আবার বিল নিতে গেলে দিতে হয় প্রতি লাখে ২০ হাজার টাকা। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে আমরা কাজ করব কি ভাবে?

প্রাপ্ত তথ্যে আরও জানা যায়, বিগত সংসদ সদস্যের সময় ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাটকেলঘাটায় বজ্রপাত নিরোধক স্টান্ড ক্রয়-২,৫০ হাজার টাকা, বজ্রপাত নিরোধক অবকাঠামো নির্মাণ ২,৫০ হাজার, নির্মাণ ব্যায়-১ লক্ষ টাকা খরচ করলেও এই ধরণের কোনো প্রতিষ্ঠান এলাকাবাসি কখনো দেখেননি। কাজ না করে সমুদয় টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন। সাংবাদিকরা জানতে চাইলে প্রকল্প কর্মকর্তা বলেন, এটা এমপি সাহেবের প্রকল্প, এ বিষয়ে কোনো কথা বলা যাবে না।

একজন ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে জানা যায়, বীর নিবাসের ঘর তৈরীতে পিআইও’র অনেক লোকসান হয়েছে। সে কারণে এসকল ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে সেই টাকা উঠাচ্ছেন বলে তিনি জেনেছেন।

নাম প্রকাশে না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, সরকারী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা বিভিন্ন ঠিকাদারের সাথে যৌথ ব্যবসা করেন। তালা উপজেলার ২/৩ জন ঠিকাদারের সাথে তিনি এই ব্যবসা পরিচালনা করেন। কখনো কখনো দূরের কোনো ঠিকাদার কাজ পেলে তার কাছ থেকে কিনে সেই কাজ এই সব ঠিকাদারদের সাথে করেন তিনি।

স্থানীয় জনসাধারণের অভিমত, বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী গ্রামকে শহরে রুপান্তরিত করার চেষ্টা কখনো সফল হবে না। প্রকল্প কর্মকর্তারা যদি এমন দূর্ণীতি গ্রস্থ হয় তাহলে কি করে দেশের উন্নয়ন হবে। এখনই সময় এসকল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এলাকাবাসির দাবি, যত শীঘ্রই এই দূর্ণীতিবাজ ঘুষখোর চলে যায় ততই মঙ্গল। তা না হলে বর্তমান এমপি সাহেবেরও সুনাম নষ্ট করে দিবে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে সোহেল বলেন, সাংবাদিকদের সামলাতে, অডিট ঠেকাতে ও অনেক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে আমাদের টাকা নিতে হয়। আপনি নিউজ করবেন কেন? স্যারের সাথে দেখা করলে তো সব সমাধান হয়ে যায়।

এবিষয়ে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি। বারবার হোয়াটসএ্যাপে ম্যাসেজ পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

জেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আব্দুল বাছেদ বলেন, কাজ না করে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদনের পরামর্শ দেন তিনি।

তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফিয়া শারমীনের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে হোওয়াটস এ্যাপে ম্যাসেজ পাঠালেও তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক