বৃহস্পতিবার , ২২ এপ্রিল ২০২১ | ২৫শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আইন ও আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আশাশুনি
  7. কক্সবাজার
  8. কলারোয়া
  9. কালিগঞ্জ
  10. কিশোরগঞ্জ
  11. কুড়িগ্রাম
  12. কুমিল্লা
  13. কুষ্টিয়া
  14. কৃষি
  15. খাগড়াছড়ি

হাওরে হিজলের ছায়ায় শরীর শীতল করে শ্রমিকরা

প্রতিবেদক
Kopotakkho Times
এপ্রিল ২২, ২০২১ ৪:১৪ অপরাহ্ণ

বাংলার প্রথম ঋতুর আবির্ভাব হয় গ্রীষ্মে। তাই ঋতুর নাম গ্রীষ্ম। বছরের প্রথম দুই মাস বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্য নিয়ে গ্রীষ্ম। গ্রীষ্মের প্রখর তাপপ্রবাহে মাঠ-ঘাট খাঁ খাঁ করে। এরই মধ্যে বৈশাখের রক্তচক্ষু ম্লান করে উপস্থিত হয় কালবৈশাখী।

একদিকে সূর্যের বহ্নিশিখা, অপরদিকে কালবৈশাখীর পৃথিবী কাঁপানো রণদামামা। এমন রুদ্র সুন্দর প্রকৃতির ডালি ভরে ওঠে আম, জাম, কাঁঠালের সরসতায়। জুঁই, চাঁপা, গন্ধরাজ, রজনীগন্ধার সৌরভে সৌরভিত হয় পল্লীর গৃহকোণ।

প্রায় ছয় মাস যে জমি ঘিরেই কৃষকের সব চিন্তা ও স্বপ্ন। ফলন ভালো হবে। সংসারের সব অভাব ঘুচবে। মোটা চাল আর ভাতে বছরজুড়ে প্রশান্তির হাসি হাসবে ছেলে-মেয়েরা। সেই বোরো ধান ঘরে তোলারও শুরু হয় এই গ্রীষ্মের প্রথম মাস বৈশাখ থেকে। নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে ভরে ওঠবে পাড়া গাঁ। পিঠা আর পুলিতে কৃষাণীরা নবান্ন উৎসব করবেন। ছোট ছোট বাজারে চায়ের স্টলগুলোতে বসবে জমপেশ আড্ডা আর পান খাওয়ার ধুম। খুশিতে মহল্লায় মহল্লায় চলবে ধামাইল।

আর গ্রীষ্মের প্রখর তাপপ্রবাহে মাঠ-ঘাট যখন খাঁ খাঁ করে তখন হাওরের কৃষকরা শুরু করেন সোনালী ফসল ঘরে তোলার কাজ। একদিকে গ্রীষ্মের প্রখর তাপপ্রবাহ। অন্যদিকে কালবৈশাখীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই এই সোনালী ফসল ঘরে তুলতে হয় ‍কৃষকদের।

হাওরে কৃষকের বোরো ধানের মাঠের কাছে তেমন কোনো গাছ নেই যে, কাজ শেষে ক্লান্ত শরীরে বিশ্রাম নেবে। হাওরে মাঝে মাঝে কিছু হিজল গাছ দেখা যায়। গ্রীষ্মের প্রখর তাপপ্রবাহে মাঠে কাজ করে সেই গাছের ছায়ায় ক্লান্ত শরীরে বিশ্রাম নেয় হাজারো কৃষক-শ্রমিক।

Kishorganj

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার সুতারপাড়া ইউনিয়নের চংনোয়াগাঁও হাওরের হাছানপুর ব্রিজের কাছে রয়েছে এমনই একটি হিজলগাছ। গাছটির তলায় যে ছায়ার বিস্তার হয়, তাতে গরমের সময় শীতল ও মনোরম পরিবেশ তৈরি হয়। এ গাছ জলজ পাখির আশ্রয়স্থল এবং বংশবিস্তারে ভূমিকা রাখে। ওষুধ হিসেবেও হিজল গাছের বীজ ও বাকল ব্যবহৃত হয়।

হিজল মাঝারি আকারের চিরহরিৎ গাছ। বাকল ঘন ছাই রঙের এবং পুরু। ডালপালার বিস্তার চারদিকে। এ গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে এবং দীর্ঘদিন বাঁচে। খাল, বিল, হাওর, বাঁওড় ও ডোবার ধারে বেশি চোখে পড়ে। হিজল গাছ নরম, উজ্জ্বল, মসৃণ ও টেকসই। পানিতে নষ্ট হয় না বলে নৌযান নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।

হিজল ফুল ফোটে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে। গোলাপি রঙের লম্বা পুষ্পদণ্ডের মধ্যে অসংখ্য ফুল ঝুলন্ত অবস্থায় ফোটে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুল ফোটা শুরু হয়, সকালের আলোয় ঝরে যায়। সকাল বেলায় হিজলতলায় গেলে মনে হয়, গোলাপি গালিচা পেতে রাখা হয়েছে। ফুলের গন্ধ মাদকতাপূর্ণ। ফল তিতা ও বিষাক্ত, দেখতে অনেকটা হরতকির মতো।

হাওরের কৃষক আবদুল আলীম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক বছর আগের এ হিজল গাছ। আমরা হাওরের ক্ষেতের কাজ শেষে এর ছায়া তলে বিশ্রাম নেই। আমাদের অনেক উপকারে আসে এই গাছ।

হাওরের আরেক কৃষক খায়ের উদ্দিন জানান, এ গাছ না থাকলে আমাদের আরও অনেক দূরে গিয়ে বিশ্রাম নিতে হতো। তখন কাজের অনেক সময় নষ্ট হতো। হিজল গাজটি এখানে থাকায় আমরা এই গরমে ধানের কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলে এর ছায়া তলে বিশ্রাম নেই।

সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির জ্যেষ্ঠপুত্র, কিশোরগঞ্জ-৪(ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মেদ তৌফিক তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে হিজল গাছের ছায়ায় ক্লান্ত শরীরে বিশ্রাম নিচ্ছে কৃষক-শ্রমিক। এমন তিনটি ছবি শেয়ার করার সঙ্গে সঙ্গে মুহূর্তের মধ্যে তা ভাইরাল হয়ে যায়।

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক